অভিবাসন ঋণ

অভিবাসন ঋণ

বাংলাদেশে এমন অনেকেই আছেন যারা চাকরি নিয়ে বিদেশ যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন, অথচ টাকা-পয়সা সংগ্রহ করতে হিমশিম খাচ্ছেন। আপনার সকল প্রেরণা অর্থসংস্থান নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ থাকায় ব্যহত হচ্ছে। তাহলে, আলোচনাটি আপনার জন্য অত্যন্ত দরকারী।

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক

আপনি জেনে আনন্দিত হবেন যে, বাংলাদেশ থেকে কাজের জন্য যারা প্রবাসে যেতে চান তাদের জন্য রয়েছে সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণের সুবিধা। প্রায় দশ বছর পূর্বে প্রবাসীদের সহায়তায় বাংলাদেশে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক যাত্রা শুরু করে। যারা কাজের জন্য বিদেশে যেতে চান, কিন্তু আর্থিক সঙ্গতির অভাব রয়েছে, তারা বিনা জামানতে এই ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারেন।

চলুন এপর্যায়ে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে অভিবাস ঋণ বা মাইগ্রেশন লোন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে যোগ্যতা, শর্তসমূহ, করণীয় ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেইঃ

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে অভিবাসন ঋণ প্রাপ্তির প্রাথমিক যোগ্যতা

  • ঘনিষ্ঠ আত্বীয় বা নিয়োগকর্তার মাধ্যমে বিদেশে চাকরির জন্য ভিসা প্রাপ্ত হলে আবেদনকারীকে নিয়োগকারী/ব্যক্তিগতভাবে সংগৃহীত ভিসার ০২ কপি (ভিসা যাচাইয়ের জন্য) ফটোকপি ও মোবাইল নম্বর প্রদান করতে হবে। (উক্ত ভিসা ০৩ (তিন) কর্মদিবসের মধ্যে যাচাই করে আবেদনকারীকে ব্যাংক হতে ফোন /এসএমএস এর মাধ্যমে জানানো হবে।)
  • আপনার অনুপস্থিতিতে আপনার ঘনিষ্ঠজন ব্যাংকের পাওনা পরিশোধের দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে।
  • অভিবাসন ঋণ গ্রহণের জন্য জামিনদার (Guarantor) এর অবশ্যই আর্থিক সচ্ছলতা থাকতে হবে।

ভিসা যাচাইয়ে সত্যতা পাওয়া গেলে পরবর্তী করণীয়

ভিসা যাচাইয়ে সত্যতা পাওয়া গেলে নিম্নে বর্ণিত কাগজপত্রসহ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে যোগাযোগ করতে হবেঃ

  • অভিবাসন ঋণ গ্রহণের জন্য ব্যবস্থাপনা পরিচালক/ব্যবস্থাপক-এর বরাবর আবেদন করতে হবে।
  • অভিবাসন ঋণ গ্রহণের আবেদন ফর্ম সংগ্রহ করতে হবে এবং আবেদন ফর্ম পূরণ করতে হবে।
  • আবেদনকারীর নিম্নোল্লিখিত ডকুমেন্ট প্রদান করতে হবে-
    • সদ্য তোলা ০৩ (তিন) কপি সত্যায়িত ছবি,
    • ভোটার আইডি কার্ডের সত্যায়িত ফটোকপি,
    • পাসপোর্টের সত্যায়িত ফটোকপি,
    • বর্তমান ঠিকানা এবং স্থায়ী ঠিকানা সংবলিত পৌরসভা/ ইউনিয়ন পরিষদ সার্টিফিকেট এর সত্যায়িত ফটোকপি ।
  • আবেদনকারীর জামিনদারদের প্রত্যেকের নিম্নোল্লিখিত ডকুমেন্ট প্রদান করতে হবে-
    • সদ্য তোলা ০২ কপি করে সত্যায়িত ছবি,
    • ভোটার আইডি কার্ডের সত্যায়িত ফটোকপি,
    • বর্তমান ঠিকানা এবং স্থায়ী ঠিকানা সংবলিত পৌরসভা / ইউনিয়ন পরিষদ সার্টিফিকেট এর সত্যায়িত ফটোকপি ।
  • অভিবাসন ঋণ গ্রহণকালে আবেদনকারীকে প্রবাসী কল্যান ব্যাংকে একটি সঞ্চয়ী হিসাব খুলতে হবে এবং অভিবাসী কর্তৃক আয়কৃত সমুদয় রেমিটেন্স উক্ত সঞ্চয়ী হিসাবের মাধ্যমে দেশে প্রেরণ করতে হবে।
  • অভিবাসন ঋণ গ্রহণকালে কর্মীকে বীমা সুবিধা নিতে হবে।
  • জামিনদারদের যে কোন এক জনের ব্যাংক একাউন্টের চেক এর ০৩টি পাতা (চেক MICR হতে হবে ) প্রদান করতে হবে।
  • আবেদনকারীকে দূতাবাস কর্তৃক প্রদত্ত ভিসা ও লেবার কন্ট্রাক্ট (যেখানে প্রাপ্ত বেতন ভাতাদির উল্লেখ রয়েছে) এর ফটোকপি (০২ কপি) এবং স্থানীয় ভাষায় অনুবাদকৃত ভিসার ফটোকপি কপি (প্রয়োজন সাপেক্ষে) এবং ভিসার যথার্থতা বিষয়ে বিএমইটি/বোয়েসেলের প্রত্যায়ন প্রদান করতে হবে।
  • শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ এর সত্যায়িত ফটোকপি (যদি থাকে) প্রদান করতে হবে।
  • শারীরিক যোগ্যতার সার্টিফিকেট এর সত্যায়িত ফটোকপি প্রদান করতে হবে ।
  • অভিবাসন ব্যয়ের বিবরণী সাদা কাগজে লিখিত আকরে প্রদান করতে হবে।
  • আবেদনকারীর বিদেশের কর্মস্থলের ঠিকানা, টেলিফোন নং / ই-মেইল ঠিকানা ইত্যাদি (যদি সম্ভব হয়) প্রদান করতে হবে।
  • বিএমইটি কর্তৃক ইস্যুকৃত ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স কার্ডের উভয় পিঠের সত্যায়িত ফটোকপি প্রদান করতে হবে।
  • কর্ম অভিজ্ঞতার সনদ প্রদান করতে হবে।
  • যে এজেন্সীর মাধ্যমে বিদেশে যাবেন অথবা বিমান টিকেট ক্রয় করবেন সে এজেন্সী কর্তৃক সম্ভাব্য যাত্রার তারিখ সহ প্রত্যায়ন প্রদান করতে হবে।
  • বিমান টিকেটের ফটোকপি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) প্রদান করতে হবে।
  • ঋণ ফেরত প্রদানের হলফনামা প্রদান করতে হবে।

অভিবাসন ঋণ পরিশোধের চার্জ ও নিয়মাবলী

  • অভিবাসন ঋণের ক্ষেত্রে সুদের হার মাত্র শতকরা ০৯ টাকা।
  • পরিশোধের দিন হতে সর্বোচ্চ ০২(দুই) মাস গ্রেস পিরিয়ড প্রদান করা হয়।
  • দেশ ভেদে প্রাপ্ত ভিসার মেয়াদ অনুযায়ী ঋণ পরিশোধের মেয়াদকাল সর্বোচ্চ ০২ বছর (২২ টি মাসিক কিস্তিতে গৃহীত ঋণ পরিশোধ করতে হবে)। যেমনঃ সৌদিআরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত,বাহারাইন, মরিশাস , ব্রুনাই, কাতার, ইতালি, ইউরোপ, ইত্যাদি।
  • সিঙ্গাপুরের ক্ষেত্রে ১০ কিস্তিতে ০১ বছরের মধ্যে ঋণ পরিশোধ করতে হবে।

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক এর অভিবাস ঋণ বা মাইগ্রেশন লোন সম্পর্কে আরও জানতে এখানে ক্লিক করতে পারেন।

সোনালী ব্যাংক লিমিটেড

সোনালী ব্যাংক লিমিটেড এরও প্রবাসী কর্মসংস্থান ঋণ প্রকল্পও চালু রয়েছে। নিচে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

প্রবাসী কর্মসংস্থান ঋণ প্রকল্প
১। ঋণের প্রকৃতি : প্রবাসী কর্মসংস্থান ঋণ প্রকল্প
২। ঋণ সীমা : চাকুরীর জন্য বিদেশ গমনের নিমিত্ত প্রকৃত বিমান ভাড়া, শ্রম ও জনশক্তি এবং প্রবাসী কল্যান ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিয়োগকারী সংস্থাকে সরকারী নিয়মানুযায়ী প্রদেয় কমিশন, সার্ভিস চার্জ ও অন্যান্য চার্জসহ প্রকৃত খরচের ১০০%, তবে তা হবে সর্বোচ্চ ৩.০০ (তিন) লক্ষ টাকা পর্যন্ত।
৩। ঋণের মেয়াদ : ৩ (তিন ) মাস গ্রেস পিরিয়ডসহ ২৪ (চব্বিশ)/৩৬ (ছত্রিশ) মাস। চাকুরীর কন্ট্রাক্ট ফর্মে বর্ণিত মেয়াদানুযায়ী ঋণের মেয়াদ নির্ধারিত হবে।
৪। সুদের হার : ১২% সরল সুদ হারে আরোপ ও আদায়যোগ্য। তবে সুদ নীতিমালা অনুযায়ী তা পরিবর্তনযোগ্য। কোন কিস্তি খেলাপী না হলে আরোপিত সুদের উপর ২% রিবেট দেয়া হবে।
৫। ঋণ প্রাপ্তির যোগ্যতা : বিদেশে চাকুরীর জন্য চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হিসেবে কার্যানুমতিপ্রাপ্ত ও ভিসাপ্রাপ্ত শুধুমাত্র বাংলাদেশী নাগরিক এ ঋণ পাওয়ার যোগ্য। তবে ঋণ মঞ্জুরীর পূর্বে ঋণ আবেদনকারী ও জামিনদাতার নিজ/স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে সিআইবি প্রতিবেদন সংগ্রহ করতে হবে। যে রিক্রুটিং এজেন্সীর মাধ্যমে বিদেশে চাকুরী নিবেন সে এজেন্সীকেও জনশক্তি রপ্তানীর ক্ষেত্রে গ্রহনযোগ্য ও সুনামের অধিকারী হতে হবে।
৬। ঋণের্ আবেদন :

ঋণগ্রহীতাকে ব্যাংকের নির্ধারিত ফরমে ও লিখিত স্বাক্ষরযুক্ত আবেদন করতে হবে। আবেদনপত্রের সাথে নিম্নবর্নিত কাগজপত্রাদি দাখিল করতে হবে।

  • ক) সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভা/ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক ইস্যুকৃত আবেদনকারীর নাগরিকত্ব সনদপত্র।
  • খ) ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি।
  • গ) পাসপোর্ট সাইজের ৩ (তিন) কপি সত্যায়িত ছবি।
  • ঘ) পাসপোর্টের সত্যায়িত ফটোকপি।
  • ঙ) বিদেশে চাকুরীর নিয়োগপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি।
  • চ) নিয়োপত্রের সঠিকতা সম্পর্কে বাংলাদেশ সরকারের শ্রম ও জনশক্তি এবং প্রবাসী কল্যান ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়ের অনুমোদনপত্রের ফটোকপি।
  • ছ) শ্রম ও জনশক্তি এবং প্রবাসী কল্যান ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয় কর্তৃক আবেদনকারীর অনুকূলে ইস্যুকৃত বিদেশ গমনের কমিশন/সার্ভিস চার্জের বিবরণ সম্বলিত প্রতয়ন পত্র।
  • জ) মাসিক বেতন থেকে প্রেরনযোগ্য অর্থের পরিমান ও চাকুরীর মেয়াদকাল সম্পর্কে শ্রম ও জনশক্তি এবং প্রবাসী কল্যান ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়ের গমন পত্র।
ঋণ পরিশোধ সূচীঃ
ঋণসীমা (টাকায়) ২১ কিস্তিতে পরিশোধযোগ্য মাসিক কিস্তি (টাকায়) ৩৩ কিস্তিতে পরিশোধযোগ্য মাসিক কিস্তি (টাকায়)
৫০,০০০ ২,৭১৫ ১,৮১৮
৬০,০০০ ৩,২৫৮ ২,১৮২
৭০,০০০ ৩,৮০১ ২,৫৪৫
৮০,০০০ ৪,৩৪৩ ২,৯০৯
৯০,০০০ ৪,৮৮৬ ৩,২৭৩
১,০০,০০০ ৫,৪২৯ ৩,৬৩৭
২,০০,০০০ ১০,৮৫৮ ৭,২৭৩
৩,০০,০০০ ১৬,২৮৬ ১০,৯০৯